গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি হয়েছিল ২০১২ সালে। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করেনি। এমন কি পরওয়ানার কাগজপত্রও গয়েব ছিল দীর্ঘদিন। অবশেষে সোমবার রাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। প্রভাবশালী পরিবার সবকিছুকে প্রভাবিত করে মাত্র ছয় ঘণ্টাতেই জামিন পেয়ে যায়। বগুড়ার আলোচিত ঋণ খেলাপি শিরিন আখতার ঝুনু। শুধু শিরিনই নন। তার স্বামী মোমিনও আরেক রাঘব বোয়াল। কৌশলে তিনি তার নামে প্রায় ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করেন।
নিয়ম অনুযায়ী ওই সব প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা লোন নিয়েছেন তিনি। মোমিন তার স্বীর নামেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। তারপর সেই সব প্রতিষ্ঠানের নামেও স্ত্রীকে দিয়ে লোন তোলেন। শিরিনও কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৬ টাকা ঋণ খেলাপি হয়। ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখা তার কাছে এই টাকা পাবে। ব্যাংক দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সেই টাকা তুলতে না পেরে মামলা করেন। সেই মামলায় ২০১২ সালে শিরিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করে আদালত। এই দম্পত্তি প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ এতোদিন তাকে গ্রেপ্তার করেনি।
ওই মামলায় নতুন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবারো একটু নড়েচরে বসেন। সেই অনুয়ায়ী ওই দিন রাতে শিরিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরের দিন আদালতে হাজির করলে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার বাদী এবং বিবাদী পক্ষের আইনবীজীদের বক্তব্য শুনেন। আদেশ পরে দেয়া হবে বলে এজলাস শেষ করেন। পরে রাতে তাকে জামিন আদেশ দেয়া হয়।
ব্যাংকের পক্ষের আইনজীবী কামাল উদ্দিন জানান, শিরিন যে মামলার আসামী তাতে জামিনযোগ্য নয়। কিভাবে তিনি জামিন পেলেন বিষয়টি তার বোধগম্য নয়। ওই আইনজীবী আরো বলেন, একজন আসামি গ্রেপ্তারি পরওয়ানা নিয়ে ছয় বছর প্রকাশ্যে গোপনে ঘুরে বেরিয়েছে। ওই আসামি আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এতো দিন চলছে। তারপরে কিভাবে সে জামিন পায় তা বোধে আসে না।
এবিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান আশরাফুল আলম জানান, শিরিনকে গ্রেপ্তার করার পর কিছুটা আশার আলো দেখছিল ব্যাংক। কিন্তু মাত্র ছয় ঘণ্টার পরেই সে জামিনে বের হয়ে যাবেন এমটা তিনিও আশা করেননি। তিনি শংকিত এতোগুলো তাদের কাছে পড়ে আছে সেই টাকাগুলো জনগণের আমানত। তারা সেই আমানতের টাকাগুলো তুলতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, জহুরুল হক মোমমিন এবং তার স্ত্রী শিরিন আখতার ঝুনুর কাজই হচ্ছে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আর ফেরত না দেয়া। এভাবে তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬২ কোটি টাকা লোন নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। শেষ পর্যন্ত শিরিনের নামে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট বগুড়া জেলা অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা করেন ব্যাংক। তৎকালীন ব্যাংকের বগুড়া শাখার সিনিয়র অফিসার রেজাউল করিম মামলাটির বাদী হন। ওই মামলায় আদালত ২০১২ সালের ১৬ জুলাই ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৬ টাকা পরিশোধের আদেশ দেয় এবং তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয়। এর আগে মোমিন আরেকটি মামলায় সাড়ে চার বছর কারাভোগ করেছে। উৎস- ঢাকাটাইমস
খবরটি শেয়ার করুন